টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

Feb 20, 2025 - 18:18
 0  8
টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

বেগুন সাধারনত একটি শীতকালিন সবজি, তবে সারা বছর এ চাষ করা যায়। বেগুন বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি সবজি। টবেও এটি ভাল ফলন হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিই কিভাবে টবে বেগুন চারা রোপন করব।

প্রথমেই জেনে নিতে হবে বেগুনের ভালো ফলন কোন ধরনের মাটিতে হয়। সাধারণত দেখা যায়, পলি দোআঁশ মাটি ও এটেঁল দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য উপযোগী। ১০-১২ ইঞ্চি ব্যাসের মাটির টব, প্লাস্টিকের গামলা অথবা অর্ধেক করে কেটে নেওয়া প্লাস্টিকের ড্রামও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাটি প্রস্তুতকরণ

টবে বেগুন রোপনের জন্য ২ ভাগ এঁটেল দোআঁশ বা পলি-দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ কোকোপিট বা গাছের গুড়া এবং ১ ভাগ জৈব সার ভাল করে মিশিয়ে নিন।

মাটি তৈরি হয়ে গেলে তা ১০-১২ দিন ধরে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আবার মাটি খুঁচিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

চারা সংগ্রহ:

দেশের বিভিন্ন হাটে-বাজারে বা শহরের নার্সারিতে বেগুনের চারা কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে সুন্দর ও বলিষ্ঠ বেগুন চারা সংগ্রহ করতে পারেন।

এ ছাড়া ভালো জাতের বীজ কিনে এনে চারা করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বীজ কিনে এনে ভালো করে শোধন করার পর ছয় ঘণ্টার মতো ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। বালি, কমপোস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত মাটি তৈরি করতে হয়। বীজ বপনের পর মাসখানেকের মধ্যেই চারা টবে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে যায়।

চারা তোলার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শিকড়ের ক্ষতি না হয়। শিকড়ের সঙ্গে কিছুটা মাটি রেখে চারা স্থানান্তর করতে হবে। বেগুনে রোগবালাই এবং পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। যে কারণে বেগুন চাষে কিছুটা সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হয়। লক্ষণ দেখা দিলেই কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।

বেগুনের রোগ দমন ব্যবস্থাপনা :

গোড়া পচা, ঢলেপড়া ও ক্ষুদে পাতা রোগ : গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদামাছি ( ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।

ফমপসিস রোগ (Phomopsis) : ফমপসিস রোগ দমনে বীজ শোধন করার জন্য গরম পানিতে ( ৫১ডিগ্রি সে) ১৫ মিনিট রাখা, অটোস্টিন ০.১ গ্রাম/৫০ গ্রাম বীজ, মূূল জমিতে অটোস্টিন ১০ গ্রাম/৫লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।

ডেম্পিং অফ বা চারা ধ্বসা/ঢলে পড়া রোগ : বীজতলায় ‘ডেম্পিং অফ’ ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়। চারার কাণ্ড ও শিকড়ে রোগ ছড়িয়ে চারা মারা যায়। রোভরাল (২ গ্রাম/লি) বা কম্প্যানিয়ন (২ গ্রাম/লি) ৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অটোস্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে ।

বেগুনের পোকা

ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড। এসব পোকা দেখা গেলে যথানিয়মে ট্রেসার ২টি স্প্রে তারপর মারশাল এই চক্র অনুসরণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা : এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে এই পোকা দ্বারা সর্বাধিক ৬৩% পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে। বেগুন ছাড়াও এ পোকা টমেটো, আলু, মটরশুটি ইত্যাদি সবজিকেও আক্রমণ করতে পারে (বারি)। ফল বিস্বাদ, খাওয়ার অনুপোযুক্ত হয়ে যায়। বেগুনের ডগা ও ফল মাজরা পোকা গাছে মাটি থেকে নেয়া পানি চলাচল ব্যহত হয় এবং ডগা, পাতা ঢলে পড়ে মারা যায়। ছিদ্রের মুখে কীড়ার মল দেখা যায়। গাছে ফুল ধরতে বিলম্ব হয়। ক্রীড়া ফুলের কুঁড়ি এবং পরে বৃতির মাধ্যমে বর্ধনরত ফলের মধ্যে প্রবেশ করে। বর্ধনরত ফল আক্রান্ত হলে তাতে ছিদ্র দেখা যায়। বেগুনের এই একটি পোকা দমন করতে ১-২টি ফসল মৌসুমে গড় দৈনিক হিসাবে শতাধিক বার অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে। অথচ বায়োলজিক্যালি অতি কম বিষাক্ত ট্রেসার প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তা দমন করা সম্ভব।

ট্রেসার মার্শাল প্রয়োগ : চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে মথ দেখার সাথে সাথে ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ৪ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। জমিতে লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ডগা অপসারণ করে একই হারে পুনরায় ট্রেসার প্রয়োগ করতে হবে। এর ৭-১০ দিন পর মার্শাল ২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোপণের কয়েক দিন পর থেকেই এ পোকার আক্রমণ হয় এবং শেষ ফলটি সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এর আক্রমণ চলতে থাকে। গ্রীষ্মকালে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ২০-৩০ দিন এবং শীতকালে ৩৪-৪৫ দিন লাগে। বছরে এরা ৫ বা বেশি বংশবিস্তার করতে পারে। মে-অক্টোবর ৩টি বংশ এবং নভেম্বর-এপ্রিল মাসের মধ্যে ২টি বংশবিস্তার হয়। স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে, কুঁড়িতে, বোঁটায় ও ডগায় ডিম পাড়ে। গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।

সমম্বিত বালাই দমন

বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নিরাপদ বেগুন উৎপাদনে ব্যাগিং ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেগুনের জমি গভীরভাবে চাষ-মই দিয়ে সমান করে আগাছামুক্ত করতে হবে। বেগুনের জমি স্বল্প ব্যয়ে আগাছামুক্ত রাখতে চাইলে চারা রোপণের ২-৩ দিনের মধ্যে মাটিতে পানিডা ৩৩ ইসি বিঘাতে ৩০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষে কার্বোটাফ ৫জি ১.৫ কেজি/বিঘা দিতে হবে। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া অতিরিক্ত দেয়া যাবে না। রোপণের ১৫ দিন থেকে সপ্তাহে একদিন ক্ষেতে জরিপ করতে হবে। ক্ষেত আগাছানাশক (পানিডা) দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ডগা বা পাতায় পোকা দেখলে পোকা ধ্বংস করাসহ বালাইনাশক দিতে হবে।

অন্যন্য পরিচর্যা:

বেগুন গাছ রোদ পছন্দ করে তাই এটিকে রোদে রাখতে হবে, তবে হালকা রোদেও এটি হয়। পানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই টবের মাটি শুকিয়ে যাবার আগেই টবে পানি দিতে হবে। চারা রোপনের ১ সপ্তাহ পরে ১ চামচ ইউরিয়া, ১ চামচ ফসফেট,১ চামচ পটাশ এবং আধা চামচ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট একসাথে মিশিয়ে আড়াই চামচ করে প্রত্যেক ২০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে করলে বেগুন গাছ প্রায় ২ বছর গাছটি ফল দিতে থাকবে।

বেগুন গাছের বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে হয়। গাছ সোজা রাখার জন্য কাঠি বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সার প্রয়োগের পাশাপাশি মাঝে মাঝে গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হয়।

গাছের বয়স বাড়লে গোড়ার দিক থেকে ২০ সেন্টিমিটার রেখে উপরের অংশ ছেঁটে দিলে কেটে দেওয়া অংশ থেকে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হয়। সেখানেও বেগুন আগের মতো বেগুন ধরবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow