বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বিলাতি ধনিয়া বা চাসনি পাতা খাবার ছাড়াও ঔষধি ও সুগন্ধি তৈরিতে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে; তাই এই পাতার চাষাবাদে চাষিদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

Mar 14, 2025 - 17:01
Mar 14, 2025 - 17:08
 0  2

বছর জুড়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করা যায়। তবে এই পাতার বীজ সাধারণত ( খরিপ মৌসুমে) নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে বোনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশের সমতল জমিগুলো সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি হওয়ার পাশাপাশি রোগবালাই কম হওয়াতে পাহাড়ি অঞ্চলে এই ধনিয়া পাতার ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।

জমি ও চারা তৈরি

জৈব সার সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি বিলাতি ধনিয়া বা চাসনি পাতার চাষের জন্য উত্তম। এই পাতার চাষাবাদের জমি ৪-৫ বার চাষ ওমই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে।

কারণ বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজ খুব ছোট হওয়ায় বড় আকারের ঢেলার মধ্যে গজানো সম্ভব হয়না।

  • এছাড়া মাটিতে প্রয়োজনীয় রস বা জো থাকা অবস্থা থাকা বীজ বোনা উত্তম।
  • সারা বছর বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করা যায়; তবে খরিপ মৌসুমে (মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য ফাল্গুন) ফসল ভাল হয়।
  • তবে সেচ নিশ্চিত করতে পারলে শুকনো মৌসুমে ও শীতকালে এই পাতার চাষাবাদ সম্ভব।
  • ১২-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত।
  • তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এর গজানো হার কমে আসে।
  • তবে বীজ বোনার পরেও অন্তত ২০-২৫ দিন কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন।
  • বীজ তলায় বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজ বপন করে চারা করা হয়।
  • চারা বড় হলে জমিতে সারিতে ১০-১৫ সে.মি. দূরত্বে বপন করতে হয়।
  • জমিতে সরাসরি বীজ বোনলে একই দূরত্ব বজায় রাখা হবে।
  • সারিতে বা ছিটিয়ে বোনলে বীজ ভাল করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়।
  • বিলম্বে চারা গজাতে দেখলে হতাশ না হয়ে চারা গজানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
  • জমিতে রস না থাকলে প্রয়োজনে হালকা সেচ দেয়া যেতে পারে।
  • বিলাতি ধনিয়ার বীজ কয়েক মাস পর্যন্ত ধীরে ধীরে গজাতে থাকে।
  • ফলে একবার বীজ বোনলে ৮ থেকে ১২ বার ফলন সংগ্রহ করা যায়।
  • সার প্রয়োগ

    বিলাতি ধনিয়া ‘পাতা জাতীয়’ ফসল হওয়ায় এই পাতার চাষাবাদে ইউরিয়া ও পটাশ সার বেশী লাগে। তাই বীজ বপনের আগে প্রতি শতাংশে জমিতে …

    • ৮০ কেজি গোবর বা জৈব সার,
    • ইউরিয়া ২০০ গ্রাম,
    • ৮০০ গ্রাম টি এস পি,
    • ৮০০-১০০০ গ্রাম এম ও পি সার শেষ চাষের আগে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

    বিলাতি ধনিয়া পাতার চারা গজানোর পর থেকে ১ মাস অন্তর অথবা ২ বার ফসল সংগ্রহের পর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

    সেচ ও পরিচর্যা

    বিলাতি ধনিয়া পাতার সবচেয়ে বড় শত্রু আগাছা। তাই ফসল ক্ষেতে আগাছা যেন জন্মাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত আগাছা নিড়ানোর প্রয়োজন হয়না।

    • বিলাতি ধনিয়ার ক্ষেতে ছাউনি না দিলে প্রখর সূর্যালোকের কারণে ধনিয়ার পাতা শক্ত ও কাঁটাযুক্ত হয়ে যায়; আবার সূর্যালোক না পাইলে ফলন ভাল হয় না।
    • মোট সূর্যালোকের ২০-৪০ ভাগ বিক্ষিপ্ত আলো বিলাতি ধনিয়ার জন্য যথেষ্ট।
    • এজন্য বাঁশের তৈরি মাচায় নারিকেল পাতা, ছন, ধৈঞ্চা, কলাপাতা ইত্যাদি দিয়ে ছাউনি করা ভালো।

    বিলাতি ধনিয়া আর্দ্রতা বেশি পছন্দ করে, তাই জমিতে রস থাকা উত্তম। তবে জলাবদ্ধতা হতে দেয়া যাবে না। বৃষ্টি সময়ে অতিরক্ত পানি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুকনো মৌসুমে ৭ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিলে সবচেয়ে ভালো।

    বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ এ রোগবালাই দমন

    সাধারণত বিলাতি ধনিয়া পাতায় তেমন রোগ ও পোকার আক্রমণ হয় না। তবে গোড়ায় পানি জমলে বা মাটি বেশি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেলে গোড়া পঁচা রোগ ও পাতা ঝলসানো ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিতে পারে।

    অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে এ রোগ দমন করতে হবে।

    ফলন ও ফসল সংগ্রহ

    সাধারণত বিলাতি ধনিয়ার সম্পূর্ণ গাছ তুলে সংগ্রহ করা হয়। ১৫-২৫ সেন্টিমিটারের মতো পাতাসহ লম্বা গাছগুলো তুলে নেয়া হয়।

    বিলাতি ধনিয়া পাতার সব বীজ এক সাথে গজায় না; ক্রমান্বয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত বীজ গজাতে থাকে। ফলে একবার বীজ বপন করেও চাষিরা অন্তত ৮ থেকে ১২ বার ফসল সংগ্রহ করতে পারেন।

    এছাড় ছাদ বাগানে বা টবে লাগানো গাছ থেকে সরাসরি পাতা তুলে ও ব্যবহার করতে পারেন; এভাবে একবার রোপণ করা গাছ থেকে অনেক দিন পাতা সংগ্রহ করা যায়।

    সুত্র: লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow